যেসব উদ্ভিদের দেহকে মূল কান্ড ও পাতায় বিবক্ত করা যায় না তাদের সমাঙ্গদেহী বলে।
ক্লোরোফিল এর উপস্থিতি ও অনুপস্থিতির ওপর এদের ২ শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়। যথাঃ
১.ক্লোরোফিল যুক্ত শৈবাল
২.ক্লোরোফিলবিহীন ছত্রাক
শৈবালঃ
শৈবাল Algae; ল্যাটিন algae = সামুদ্রিক আগাছা অত্যন্ত সরল প্রকৃতির সালোকসংশ্লেষণকারী, ভাস্কুলার টিস্যুবিহীন, সমাঙ্গদেহী জলজ উদ্ভিদ যাদের জননাঙ্গ এককোষী এবং নিষেকের পর কোন ভ্রূণ গঠিত হয়না তাদের শৈবাল বলে। এ পর্যন্ত প্রায় ৩০,০০০ প্রজাতির শৈবাল গছে বলে ধারণা করা হয়। বিভিন্ন পরিবেশে শৈবাল জন্মায়। এরা জলজ, স্থলজ বা পরাশ্রয়ী হতে পারে । জলজ বালের সংখ্যাই সর্বাধিক। জলজ শৈবালেরা পুকুর, ডোবা, হ্রদ প্রভৃতির স্থির পানিতে অথবা নদী, সমুদ্র প্রভৃতির বাহমান পানিতেও জন্মায় । সম্পূর্ণ ভাসমান শৈবালকে ফাইটোপ্লাংকটন বলে।(জলাশয়ের পানির নিচে মাটিতে আবদ্ধ হয় যে শৈবাল জন্মায় তাদেরকে বলা হয় বেনথিক শৈবাল।) (পাথরের গায়ে জন্মানো শৈবালকে লিখোফাইট বলে) (উচ্চ শ্রেণির জীবের টিস্যুভান্তরে জন্মানো শৈবালকে বলা হয় এন্ডোফাইট।) এপিফাইট হিসেবে কিছু শৈবাল অন্য শৈবালের গায়েও জন্মায়। শৈবাল বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং গবেষণা করাকে ফাইকোলজি (Phycology) বলে।
শৈবালের মুখ্য বৈশিষ্ট্য (Salient features of Algae):
* শৈবালের দেহ সমাঙ্গদেহী বা থ্যালয়েড (thalloid) অর্থাৎ দেহ মূল, কাণ্ড ও পাতায় বিভেদিত নয় ।
* দেহ গ্যামেটোফাইটিক (gametophytic), হ্যাপ্লয়েড (n) এবং আলোর উপর নির্ভরশীল ।
* কোষে ক্লোরোফিল থাকায় দেখতে সবুজ ও স্বভাবে স্বভোজী।
* কোষপ্রাচীর সেলুলোজ ও পেকটিন সমন্বয়ে নির্মিত। এছাড়াও পিচ্ছিল মিউসিলেজ বিদ্যমান।
* অধিকাংশ শৈবালের সঞ্চিত খাদ্য কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা; কিছু সদস্যে চর্বি, অ্যালকোহল বা তৈল সঞ্চিত থাকে।
* এদের দেহে পরিবহন টিস্যু (vascular tissue) অনুপস্থিত।
* শৈবালের স্পোরাঞ্জিয়াম (sporangium) সরল ও এককোষী এবং এর মধ্যে উৎপন্ন সচল বা নিশ্চল স্পোরের সাহায্যে অযৌন জনন ঘটে।
* যৌন জনন অঙ্গ সরল ও এককোষী এবং যৌন জনন আইসোগ্যামাস (isogamous), অ্যানআইসোগ্যামস (anisogamous) ও উগ্যামাস (oogamous) প্রকৃতির।
* জনন অঙ্গ সাধারণত কোন বন্ধ্যা আবরণী দ্বারা আবৃত থাকে না (ব্যতিক্রম- Chara)।
* জাইগোট কোন ক্ষেত্রেই ভ্রূণে পরিণত হয় না ।
* সাধারণত সুস্পষ্ট জনুক্রম অনুপস্থিত।
শৈবালের গঠনঃ গঠনগতভাবে শৈবালদের দেহ সরল প্রকৃতির । এরা এককোষী বা বহুকোষী হতে পারে । আয়তনে এরা আণুবীক্ষণিক (Prochlorococcus marincls, ব্যাস ০.৫ মাইক্রন) হতে শুরু করে ৬০ মিটার (বাদামী শৈবাল, Macrocystic pyrifera) পর্যন্ত দীর্ঘ ও বৃহৎ আকৃতির হয়। বাদামি ও লোহিত শৈবালের দেহ শাখা-প্রশাখাবিশিষ্ট ও জটিল । নিচে
শৈবালের অঙ্গজ ও কোষীয় গঠন বর্ণনা করা হলো।
দৈহিক গঠন (Vegetative structure):
কিছু এককোষী শৈবালের দেহে ফ্ল্যাজেলা থাকায় এরা সচল, যেমন-Chlamydomonas; আবার অন্যদের দেহ ফ্ল্যাজেলাবিহীন তাই নিশ্চল, যেমন- Navicula. অনেক এককোষী শৈবাল (নিশ্চল, সচল) কলোনি হিসেবে অবস্থান করে, যেমন-Volvox, সূত্রাকার (filamentous) শৈবালগুলো অশাখ, যেমন- Spirogyra কিংবা শাখান্বিত,যেমন—Pithophora হতে পারে। কিছু শৈবাল দেখতে শাখা-প্রশাখাযুক্ত উদ্ভিদের মতো, যেমন- Sargassum. কোন কোন শৈবালের দেহ পর্ব ও পর্বমধ্য নিয়ে গঠিত, যেমন- Chara কারও দেহ পাতার মতো চ্যাপ্টা, যেমন-Ulva, কৌন শৈবালের দেহ ফাঁপা নল (siphon)-এ গঠিত যেমন-Polysiphonia.
কোষীয় গঠন (Cell structure): শৈবালের কোষের গঠন অনেকটা উঁচুশ্রেণির উদ্ভিদকোষের মতোই। প্রতিটি কোষ দ্বিস্তরী মৃত কোষপ্রাচীর দিয়ে আবৃত। রাসায়নিকভাবে প্রাচীরটি বিভিন্ন ধরনের শর্করা যেমন-সেলুলোজ, পেকটিন, মিউসিলেজ প্রভৃতি দিয়ে গঠিত। কোন কোন ক্ষেত্রে কোষপ্রাচীরে প্রোটিন সঞ্চিত থাকে। কোষপ্রাচীরের ঠিক নিচেই রয়েছে লিপিড ও প্রোটিন দিয়ে তৈরি সজীব কোষঝিল্লি । কোষঝিল্লি দিয়ে পরিবেষ্টিত থকথকে জেলির মতো বস্তুটি সাইটোপ্লাজম । সাইটোপ্লাজমে সাধারণত একটি নিউক্লিয়াস, বৃহদাকার ক্লোরোপ্লাস্ট, মাইটোকন্ড্রিয়া, গলজি বস্তু, পাইরিনয়েড, রাইবোজোম ইত্যাদি অঙ্গাণু থাকে। শৈবালের কোষে প্রধানত শর্করা জাতীয় খাদ্যবস্তু সঞ্চিত থাকে। কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন শৈবালের, সঞ্চিত শর্করার প্রকৃতিও ভিন্ন ভিন্ন ধরনের হয়। যেমন, সবুজ শৈবালের ক্ষেত্রে সঞ্চিত খাদ্যবস্তু প্রধানত স্টার্চ বা শ্বেতসার, বাদামী শৈবালের ক্ষেত্রে সঞ্চিত খাদ্য ল্যামিনারিন ও ম্যানিটল, হলুদ-সোনালী শৈবালে সঞ্চিত শর্করা ডলিউটিন ও চর্বি, লোহিত শৈবালে ক্ষেত্রে ফ্লোরিডিয়ান স্টার্ট প্রভৃতি । এছাড়া শৈবালে সঞ্চিত খাদ্য হিসেবে চর্বি ও তৈল, লিউকোসিন, প্যারামাইলাম প্রভৃতি থাকে ।
শৈবালের জনন (Reproduction of Algae): শৈবালে তিন ধরনের জনন পদ্ধতি সংঘটিত হতে দেখা যায়- অঙ্গজ, অযৌন এবং যৌন ।
১.অঙ্গজ জনন (Vegetative Reproduction): স্পোর (spore) অথবা গ্যামেট (gamete) সৃষ্টি ব্যতিরেকে যে প্রক্রিয়ায় জীবের দেহাংশ থেকে নতুন জীব সৃষ্টি হয় তাকে অঙ্গজ জনন বলে। শৈবালে নিম্নলিখিত বিভিন্ন উপায়ে এটি সংঘটিত হয়।
• কোষ বিভাজনের মাধ্যমে (By Cell Division) : এককোষী শৈবালে সাধারণত কোষ বিভাজনের মাধ্যমে জননক্রিয়া সম্পন্ন হয়। মাতৃকোষের বিভাজনের মাধ্যমে যে অপত্য কোষদুটি সৃষ্টি হয় সেগুলোই বৃদ্ধি পেয়ে নতুন উদ্ভিদে পরিণত হতে পারে। উদাহরণ-Euglena, Diatom ইত্যাদি ।
• খন্ডায়নের মাধ্যমে (By Fragmentation) : অশাখ সূত্রবৎ শৈবাল এবং কলোনীবাসী শৈবালের দেহ দুই বা ততোধিক খণ্ডে বিভক্ত হলে প্রতিটি খণ্ড স্বাধীন উদ্ভিদে পরিণত হয়, যথা- Ulothrix, Oedogonium
• হর্মোগনিয়াম-এর মাধ্যমে (By Hormogonium) : (Myxophyceae শৈবালের ট্রাইকোম দুই বা ততোধিক খণ্ডে বিভক্ত হয়ে প্রতিটি খণ্ড এক একটি হর্মোগনিয়াম উৎপন্ন করে । প্রত্যেক হর্মোগনিয়াম নতুন উদ্ভিদে পরিণত হয় । উদাহরণ-Oscillatoria, Nostoc, Westiella ইত্যাদি (প্রতিকূল পরিবেশে হর্মোগোনিয়াম পুরু প্রাচীর দ্বারা আবৃত হলে তাকে হর্মোসিস্ট বলে )।
• টিউবার-এর মাধ্যমে (By Tuber) : কোনো কোনো উদ্ভিদের রাইজয়েড অঞ্চলে টিউবার নামক অঙ্গের সৃষ্টি হয়। এসব টিউবার নতুন উদ্ভিদের জন্ম দেয়। উদাহরণ- Chara |
• মুকুল (Bud) : কোনো কোনো শৈবাল মুকুল সৃষ্টির মাধ্যমে নতুনভাবে পূর্ণাঙ্গ শৈবালদেহ সৃষ্টি করে। উদাহরণ-Protosiphon 1
২. অযৌন জনন (Asexual Reproduction):
বিভিন্ন ধরনের স্পোর বা রেণু সৃষ্টির মাধ্যমে যে জনন প্রক্রিয়া সাধিত হয় তাকে অযৌন জনন বলে। স্পোর হচ্ছে অযৌন জননের একক । যে বিশেষ ধরনের গঠনে বা থলিতে স্পোর উৎপন্ন হয় তাকে বলা হয় স্পোরাঞ্জিয়াম sporangium, বহুবচন sporangia)) (স্পোরাঞ্জিয়ামের মধ্যে স্পোর উৎপাদনের প্রক্রিয়াকে স্পোরুলেশন sporulation) বলে।) স্পোর সাধারণত হ্যাপ্লয়েড (n), তবে ডিপ্লয়েড (2n)ও হতে পারে। শৈবালের হ্যাপ্লয়েড থ্যালাস গঠন করে বংশ বৃদ্ধি ঘটায় স্পোর ফ্ল্যাজেলাযুক্ত ও সচল হলে তাকে ক্রুশোর (zoospore) মোর অঙ্কুরিত হয়ে বলে, যেমন- Ulothrix (বহুসংখ্যক ফ্ল্যাজেলাবিশিষ্ট একটি মাত্র জুস্পোর উৎপন্ন হলে তাকে সিনজুস্পোর বলে। ফ্ল্যাজেলাবিহীন নিশ্চল স্পোরকে বলা হয় অ্যাপ্লানোস্পোর। (aplanospore); যেমন-Microspora. প্রতিকূল পরিবেশেঅ্যাপ্লানোস্পোর পুরু প্রাচীরবেষ্টিত হলে তাকে হিপনোস্পোর বলে। যেমন-Chlamydomonas. মাতৃকোষের অনুরূপ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন অচল স্পোরকে অটোস্পোর (autospore) বলে। যেমন- Chlorella। (কতক শৈবাল কোষের পুরো প্রোটোপ্লাস্ট খাদ্য সঞ্চয় করে এবং পুরু প্রাচীর বেষ্টিত হয়, তখন তাকে অ্যাকাইনিটি বলে। অনুকূল পরিবেশে অ্যাকাইনিটি অঙ্কুরিত হয়ে নতুন শৈবালে পরিণত হয়, যেমন- Pithophora, Cladophora (ডায়াটম জাতীয় শৈবালে বিশেষ ধরনের স্পোর সৃষ্টির মাধ্যমে সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটে। এদেরকে অক্সোম্পোর বলে; যেমন-Navicula
৩. যৌন জনন (Sexual Reproduction):
দুটি বিপরীতধর্মী গ্যামেটের মিলনের ফলে যে জনন সম্পন্ন হয় তাকে যৌন জনন বলে। যৌন মিলনের গ্যামেট দুটির একটিকে পুংগ্যামেট এবং অপরটিকে স্ত্রীগ্যামেট বলে গ্যামেট যে বিশেষ জননাঙ্গে উৎপন্ন হয় তাকে গ্যামেট্যাঞ্জিয়াম (gametangium, বহুবচনে gametangia) বলে । গ্যামেটকে যৌন জননের একক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় । গ্যামেট হ্যাপ্লয়েড (n) প্রকৃতির। শৈবালের যৌন জননাঙ্গ প্রায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সরল ও এককোষী এবং তার বাইরে কোন বন্ধ্যা আবরণী থাকে না। নীলাভ-সবুজ শৈবাল ব্যতীত সব শৈবালে যৌন জনন সংঘটিত হয়। তবে, জানা গেছে নীলাভ-সবুজ শৈবালেও ব্যাকটেরিয়ার মতো জিনের পুন:সংযোজন ঘটে। শৈবালের যৌন জনন পদ্ধতি নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ
ক. আইসোগ্যামি (Isogamy) : আকার ও প্রকৃতিগতভাবে একই রকম দুটি গ্যামেটের মিলনকে আইসোগ্যামী বলে । এটি একটি সরল ও অনুন্নত পদ্ধতি । এরূপ যৌন জননে একটি গ্যামেটকে + (পুং) এবং অপরটিকে – (স্ত্রী) গ্যামেট বলা হয়। অনুন্নত শৈবালে এ প্রক্রিয়া বেশি দেখা যায়। যেমন- Chlamydomonas, Ulothrix, Spirogyra ইত্যাদি।
খ. অ্যানআইসোগ্যামি (Anisogamy) : (আকার ও প্রকৃতিগতভাবে ভিন্ন দুটি সচল গ্যামেটের মিলনকে অ্যানআইসোগ্যাসি বলে। এক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত ছোট ও অধিকতর সক্রিয় গ্যামেটকে পুংগ্যামেট এবং বড় গ্যামেটটিকে স্ত্রীগ্যামেট বলা হয়। যেমন-Caulerpa, Chamydomonas Panderina ইত্যাদি।
গ. উগ্যামি (Oogamy) : একটি ক্ষুদ্র ও সাধারণত সচল পুংগ্যামেটের (শুক্রাণুর) সাথে একটি বড় আকারের নিশ্চল স্ত্রীগ্যামেটর (ডিম্বাণুর মিলন প্রক্রিয়াকে উগ্যামি বলে। এক্ষেত্রে শুক্রাণু অ্যান্থেরিডিয়ামের মধ্যে এবং ডিম্বাণু উগোনিয়ামের মধ্যে উৎপন্ন হয়। উগ্ন্যামী সবচেয়ে উন্নত ধরনের যৌন জনন এবং উন্নত শৈবালে বেশি দেখা যায়। উদাহরণ-Volvox, Oedogonium, Chara, Polysiphonia, Fucus ইত্যাদি।
Ulothrix (ইউলোথ্রিক্স): Ulothrix একটি অশাখ সবুজ শৈবাল। এতে বেল্ট বা গার্ডল আকৃতির ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে। দ্বিফ্ল্যাজেলা বা চার ফ্ল্যাজেলাযুক্ত জুস্পোরের মাধ্যমে অযৌন জনন ঘটে। যৌন জনন আইসোগ্যামি।
বাসস্থানঃ
Ulothrix সাধারণত মিঠা পানির পুকুর, খাল, বিল, হাওড়, নদী-নালা প্রভৃতি জলাশয়ে জন্মে থাকে। খাড়া পাহাড় বা অনুরূপ স্থান যেখানে সর্বদাই পানি পড়ে সেখানেও এরা জন্মে থাকে। Ulothrix শৈবালের ৬০টি প্রজাতির মধ্যে অধিকাংশই মিঠা পানিতে জন্মে থাকে, তবে কতক প্রজাতি সামুদ্রিক। বাংলাদেশ থেকে U. simplex, U. tenerrima এবং U. variabilis নামক তিনটি প্রজাতি বর্ণিত হয়েছে। এর মধ্যে U. simplex এর আবিষ্কারক প্রফেসর এ.কে.এম নুরুল ইসলাম (১৯৬৯)। এটি সম্ভবত বাংলাদেশে এন্ডেমিক।
Ulothrix এর শ্রেণিবিন্যাসঃ
Division : Chlorophyta
Class : Chlorophyceae
Order : Ulotrichales
Family : Ulotrichaceae
Genus : Ulothrix
দৈহিক গঠন (Physical structure):
Ulothrix একটি ফিলামেন্টাস (সূত্রময়) এবং অশাখ সবুজ শৈবাল। ইহা অসীম বৃদ্ধি সম্পন্ন। এর দেহ এক সারি খর্ব ও বেলনাকার কোষদ্বারা গঠিত। এর গোড়ার কোষটি লম্বাকৃতির, বর্ণহীন এবং নিচের দিকে ক্রমশ সরু, একে হোল্ডফাস্ট বলে। হোল্ডফাস্ট দ্বারা শৈবালটি (বিশেষ করে কচি অবস্থায়) কোনো বস্তুর ক্লোরোপ্লাস্ট সাথে আবদ্ধ থাকে। ফিলামেন্টের প্রতিটি কোষের একটি সুনির্দিষ্ট কোষপ্রাচীর আছে। হোল্ডফাস্ট ছাড়া প্রত্যেক কোষে একটি নিউক্লিয়াস আছে, একটি বেল্ট বা ফিতা আকৃতির (girdle shaped) বা আংটি আকৃতির ক্লোরোপ্লাস্ট আছে এবং ক্লোরোপ্লাস্টে এক বা একাধিক পাইরিনয়েড আছে। পাইরিনয়েড হলো প্রোটিন জাতীয় পদার্থের চকচকে দানা, যার চারদিকে অনেক সময় স্টার্চ থাকে। ক্লোরোপ্লাস্টটি কোষকে আংশিকভাবে অথবা সম্পূর্ণভাবে বেষ্টন করে রাখে। হোল্ডফাস্ট ছাড়া অন্য যে কোনো কোষ প্রস্থে বিভক্ত হতে পারে, ফলে ফিলামেন্ট দৈর্ঘ্যে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।
Ulothrixএর জনন (Birth):
Ulothrix অঙ্গজ, অযৌন এবং যৌন জনন পদ্ধতিতে বংশবৃদ্ধি করে।
ক. অঙ্গজ বংশবৃদ্ধি (Organ Breeding):
খণ্ডায়নের মাধ্যমে এর অঙ্গজ বংশবৃদ্ধি হয়ে থাকে। দৈবক্রমে মাঝখানে কেটে দেয়া হয়েছে।) ফিলামেন্টটি ভেঙ্গে কয়েকটি খণ্ডে পরিণত হলে প্রত্যেক খণ্ড কোষ বিভাজনের মাধ্যমে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে এক একটি নতুন Ulothrix রূপে আত্মপ্রকাশ করে।
খ. অযৌন জনন (Asexual reproduction):
জুষ্পের সৃষ্টির মাধ্যমে Ulothrix-এর অযৌন জনন সম্পন্ন হয়। কখনো কখনো অ্যাপ্লানোস্পোর সৃষ্টির মাধ্যমেও অযৌন জনন হয়ে থাকে। জুস্পোরগুলো সাধারণত চার ফ্ল্যাজেলা যুক্ত। যে কোষ হতে জুস্পোর উৎপন্ন হয় তাকে জুস্পোরাঞ্জিয়াম বলে। হোল্ডফাস্ট ছাড়া অন্য যে কোনো কোষ হতে জুষ্পের সৃষ্টি হতে পারে। প্রজাতির ওপর নির্ভর করে প্রত্যেক জুস্পোরাঞ্জিয়াম হতে ১ – ৩২টি জুস্পোর সৃষ্টি হয়। একটি মাত্র জুস্পোর সৃষ্টি হলে কোষের সম্পূর্ণ প্রোটোপ্লাস্টই একটি জুস্পোরে রূপান্তরিত হয়।
একাধিক জুস্পোর উৎপন্ন হলে জুস্পোরাঞ্জিয়ামের প্রোটোপ্লাস্ট একটু সংকুচিত হয় এবং লম্বালম্বিভাবে দু’ভাগে বিভক্ত হয়। প্রজাতির ওপর নির্ভর করে ৩২টি অপত্য প্রোটোপ্লাস্ট সৃষ্টি পর্যন্ত এই বিভাজন চলতে পারে। প্রতিটি অপত্য প্রোটোপ্লাস্ট তখন চার ফ্ল্যাজেলা যুক্ত জুস্পোরে রূপান্তরিত হয়। সরু কোষের প্রজাতি হতে সৃষ্ট সকল জুস্পোর একই প্রকার হয় কিন্তু মোটা কোষের প্রজাতি হতে দুই প্রকার জুস্পোর উৎপন্ন হয়। ক্ষুদ্রাকৃতির বা মাইক্রোজুস্পোর-এর আইস্পট মধ্যখানে থাকে এবং একটি জুস্পোরাঞ্জিয়াম হতে ৮-৩২টি জুস্পোর উৎপন্ন হয়। বৃহদাকৃতির বা মেগাজুস্পোর-এর আইস্পট সম্মুখভাগে থাকে এবং একটি জুস্পোরাঞ্জিয়াম হতে ১-৪টি জুস্পোর উৎপন্ন হয়। জুস্পোরগুলো নাসপাতি আকৃতির। একটি ভেসিকল দ্বারা পরিবেষ্টিত অবস্থায় জুস্পোরগুলো জুস্পোরাঞ্জিয়াম প্রাচীরের গায়ে উৎপন্ন ছিদ্রপথে বের হয়ে আসে এবং ভেসিকলের অবলুপ্তির পর এরা মুক্তভাবে ভেসে বেড়ায়। ২-৬, দিন সন্তরণের (সাঁতার কাটার) পর জুস্পোরের ফ্লাজেলাযুক্ত মাথাটি কোনো জলজ বস্তুর সাথে আবদ্ধ হয়। আবদ্ধ হওয়ার পর এরা আস্তে আস্তে ফ্লাজেলাবিহীন হয়, এর চারদিকে একটি প্রাচীর গঠন করে এবং ক্রমে দীর্ঘ হয় ও বিভাজনের মাধমে নতুন Ulothrix ফিলামেন্ট সৃষ্টি করে। প্রতিকূল পরিবেশে জুস্পোরগুলো জুস্পোরাঞ্জিয়াম হতে নির্গত হয় না, অধিকন্তু এদের চারদিকে একটি প্রাচীর গঠন করে। অ্যাপ্ল্যানোস্পোরে পরিণত হয়।
কখনো কখনো কোনো একটি কোষের সম্পূর্ণ প্রোটোপ্লাস্ট গোলাকার হয় এবং চারপাশে একটি পুরু প্রাচীর গঠন করে অ্যাকাইনিটিতে পরিণত হয়। একে হিপনোস্পোরও বলা হয়। প্রচুর সঞ্চিত খাদ্য সম্বলিত যে স্পোরের মাধ্যমে জীব তার প্রতিকূল অবস্থা অতিক্রম করে তাকে রেস্টিং স্পোর বলে। অনুকূল পরিবেশে এরা এদের পুরু প্রাচীর বিদীর্ণ করে বের হয়ে আসে এবং অঙ্কুরায়ন ও বিভাজনের মাধ্যমে নতুন ফিলামেন্টে পরিণত হয়।
গ. যৌন জনন (Sexual reproduction):
Ulothrix একটি ভিন্নবাসী বা হেটেরোথ্যোলিক শৈবাল (স্ত্রী ও পুরুষ জননকোষ আলাদা দেহে উৎপন্ন হয়)। Ulothrix শৈবাল এর যৌন মিলন আইসোগ্যামাস। হোল্ডফাস্ট ছাড়া যে কোনো একটি কোষের প্রোটোপ্লাস্ট বিভাজনের মাধ্যমে ৮-৬৪টি অপত্য প্রোটোপ্লাস্ট সৃষ্টি করে। প্রতিটি অপত্য প্রোটোপ্লাস্ট একটি নাসপাতি আকৃতির বাইফ্ল্যাজিলেট গ্যামিটে রূপান্তরিত হয়। গ্যামিটগুলো জুস্পোর হতে ক্ষুদ্রাকৃতির। এদের আইস্পট অত্যন্ত স্পষ্ট।
একটি ভেসিকল দ্বারা পরিবেষ্টিত অবস্থায় এরা জননকোষাধার বা গ্যামিটেঞ্জিয়াম (যে কোষ হতে গ্যামিট সৃষ্টি হয়)-এর প্রাচীরে সৃষ্ট ছিদ্রপথে বের হয়ে আসে এবং ভেসিকলের অবলুপ্তির পর মুক্তভাবে সাঁতরে বেড়ায়। দুটি ভিন্ন ফিলামেন্ট হতে দু’টি ভিন্নধর্মী (+,-) গ্যামিট দেহের বাইরে এসে যৌন মিলন সম্পন্ন করে এবং একটি চার ফ্ল্যাজেলাযুক্ত ডিপ্লয়েড (2n) জাইগোট সৃষ্টি করে।
জাইগোটের অঙ্কুরোদগমঃ জাইগোট কিছুকাল সচল থাকে, পরে ফ্ল্যাজেলাবিহীন হয়ে পুরু প্রাচীরবিশিষ্ট হয় এবং পরে বিশ্রামকাল কাটায়। বিশ্রামের পূর্বে এরা প্রচুর খাদ্য সঞ্চয় করে এবং চারদিকে একটি প্রাচীর সৃষ্টি করে। বিশ্রামকাল শেষে এতে মায়োসিস বিভাজন হয় এবং ৪-১৬টি হ্যাপ্লয়েড (n) জুস্পোর (প্রতিকূল অবস্থায় অ্যাপ্ল্যানাস্পোর) সৃষ্টি করে। জাইগোট প্রাচীর বিদীর্ণ হওয়ার মাধ্যমে জুস্পোরগুলো (অথবা অ্যাপ্লানোস্পোর) বের হয়ে আসে এবং অঙ্কুরায়ন ও বিভাজনের মাধ্যমে নতুন উদ্ভিদে পরিণত হয়। Ulothrix এর জীবন চক্র Hanlantic অর্থাৎ বহুকোষী গ্যামিটোফাইটিক জনুর সাথে এককোষী স্পোরোফাইটিক জনুর জনুক্রম ঘটে।
ছত্রাকঃ Fungus একটি ল্যাটিন শব্দ । এর আভিধানিক অর্থ “মাশরুম” (mushroom) বা ব্যাঙের ছাতাসদৃশ বস্তু। উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহে এরা নানা ধরনের রোগ সৃষ্টি করে। অবশ্য বহুসংখ্যক ছত্রাক আমাদের প্রভূত উপকারও করে থাকে। পৃথিবীতে আনুমানিক ৯০,১০০ প্রজাতির ছত্রাক আছে। জীববিজ্ঞানের যে শাখায় ছত্রাক বিষয়ে পড়াশুনা করা হয় তাকে মাইকোলজি (Mycology; গ্রিক, mykes = mushroom + logos = Knowledge) বলে।Whittaker (1959)-এর পাঁচজগত শ্রেণিবিন্যাস (Five Kingdom Classification) অনুসারে ছত্রাক। ফানজাই (Fungus: Plural Fungi) একটি স্বতন্ত্র জগত বলে বিবেচিত (অন্যান্য জগতগুলো হলো- মনেরা, প্রোটিস্টা প্লান্টি এবং অ্যানিম্যালিয়া)। বিশিষ্ট ছত্রাকবিদ Alexopoulos এর সংজ্ঞা অনুযায়ী (ক্লোরোফিলবিহীন, নিউক্লিয়াসযুক্ত,অভাস্কুলার, মাইসিলিয়ামবিশিষ্ট গঠন যাদের প্রাচীর কাইটিন ও সেলুলোজে নির্মিত এবং যারা অযৌন ও যৌন উপারে বংশ বৃদ্ধি করে তাদেরকে ছত্রাক বলা হয়। Dr. Lynn Margulis (1974) ফানজাই জগতকে ৫টি ফাইলাম এ বিভক্ত করেছেন। ফাইলামগুলো হলো- ১. Zygomycota, ২: Ascomycota, ৩. Basidiomycota, 8. Deuteromycota, g Mycophycophyta.
বসতিঃ ছত্রাকের বাসস্থান বিচিত্রধর্মী। মাটি, পানি, বায়ু, উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহ, পচনশীল জীবদেহ বা দেহাবশেষ সর্বত্র ছত্রাক বাস করে। স্থলজ ছত্রাকগুলো সাধারণত জৈব পদার্থ বিশেষত হিউমাস-সমৃদ্ধ মাটিতে ভাল জনে। জলভ ছত্রাকগুলো সাধারণত পানিতে অবস্থানকারী জীবসমূহের পঁচনশীল মৃতদেহের উপর বসাবাস করে।
ছত্রাকের বৈশিষ্ট্যঃ
অঙ্গজ গঠনঃ
* ছত্রাক থ্যালোফাইটা জাতীয় উদ্ভিদ অর্থাৎ এর দেহ মূল, কাণ্ড ও পাতায় বিভেদিত নয়।
* এককোষী ছাড়া প্রায় সব ছত্রাকের দেহ শাখাহীন বা শাখান্বিত সুতার মত হাইফি (hyphae) দিয়ে গঠিত।
* এদের দেহে কোন ক্লোরোফিল থাকে না বলে এরা নিজেদের খাদ্য নিজেরা তৈরি করতে পারে না।
* ছত্রাক পরজীবী, মৃতজীবী বা মিথোজীবী এবং শোষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য গ্রহণ করে।
* ছত্রাকের কোষপ্রাচীর প্রধানত কাইটিন (chitin) দিয়ে গঠিত। কোন কোন ক্ষেত্রে সেলুলোজ থাকে ।
* ছত্রাকের দেহের অভ্যন্তরে কোন পরিবহন টিস্যু (vascular tissue) নেই।
* কোষের প্রধান সঞ্চিত পদার্থ গ্লাইকোজেন, কখনো কখনো কিছু পরিমাণ ভলিউটিন ও চর্বি থাকতে পারে।
* ছত্রাক সাধারণত চলাফেরা করতে পারে না; তবে কিছু কিছু জনন কোষ (zoospore) চলনক্ষম ।
* ছত্রাকের জননাঙ্গ এককোষী ।
* স্ত্রী জননাঙ্গে থাকা অবস্থায় জাইগোট বহুকোষী ভ্রূণে পরিণত হয় না; জাইগোট-এ মিয়োসিস ঘটে ।
* এরা প্রধানত স্পোর উৎপাদনের মাধ্যমেই জনন ঘটায় এবং তা অযৌন ও যৌন পদ্ধতিতে উৎপন্ন হয়।
* ছত্রাকের সূত্রকগুলো কেবলমাত্র অগ্রভাগ দিয়ে বৃদ্ধি পায়।
*এদের রয়েছে তীব্র অভিযোজন ক্ষমতা (কেউ কেউ ৫° সেল. নিম্ন তাপমাত্রায় এবং অনেকে ৫০° সেল. উপর তাপমাত্রায় জন্মাতে পারে)।
* ছত্রাক সাধারণত স্যাঁতসেঁতে, আর্দ্রতাপূর্ণ ও ছায়াযুক্ত স্থানে জন্মায় ।
ছত্রাকের গঠনঃ
ছত্রাক-এর দেহ থ্যালয়েড (thalloid)। থ্যালাস এককোষী বা বহুকোষী হতে পারে। অল্প কয়েকটি এককোষী সদস্য, যেমন- ঈস্ট এবং সরলতম সদস্য, যেমন- স্লাইম মোল্ড (slime mould) ব্যতীত অন্য সকল ছত্রাকের দেহ মাইসেলিয়াম (mycelium) সমন্বয়ে গঠিত। মাইসেলিয়াম সরু ও লম্বা সুতার মতো। মাইসেলিয়ামের প্রতিটি সুতার মতো অংশকে হাইফা (hypha; বহুবচনে hyphae) বলে প্রকৃত পক্ষে, হাইফি দিয়ে গঠিত ছত্রাকের জট লাগানো দেহই হচ্ছে মাইসেলিয়াম। এককোষীই হোক বা মাইসেলিয়াম-বিশিষ্টই হোক অধিকাংশ ছত্রাক আকারে অতি ক্ষুদ্র, খালি চোখে দেখা যায় না। তবে খালি চোখে দেখা যায় এমন ছত্রাকও আছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ব্যাঙের ছাতা। অনেক ছত্রাক খালি চোখে সাদা তুলার মতো দৃষ্ট হলেও অনুবীক্ষণযন্ত্রে শাখা-প্রশাখাবিশিষ্ট জালের মতো দেখায়। বহু শাখা-প্রশাখাবিশিষ্ট জালের মতো এই দৈহিক গঠনের নামই। মাইসেলিয়াম যা অসংখ্য হাইফি সমন্বয়ে গঠিত। প্রতিটি হাইহা লম্বা ও নলাকৃতি। নলটি স্বচ্ছ ও প্রোটোপ্লাস্টে পরিপূর্ণ থাকে। হাইফা প্রপ্রাচীরযুক্ত বা এই প্রাচীরবিহীন হতে পারে। (গ্রহপ্রাচীরবিহীন মাইসেলিয়ামকে সিনোসাইটিক মাইসেলিয়াম (synocytic mycelium) এবং গ্রন্থপ্রাচীরযুক্ত মাইসেলিয়ামকে সেপ্টেট মাইসিলিয়াম (septate mycelium) বলে। আদিম প্রকৃতির নিম্নশ্রেণির হুরাকে সিনোসাইটিক মাইসিলিয়াম এবং উন্নত ও উচ্চশ্রেণির ছত্রাকে সেপ্টেট মাইসেলিয়াম দেখা যায়। কোন কোন ছত্রাকের মাইসেলিয়াম থেকে সুতার মতো রাইজয়েড উদগত হয়। রাইজয়েও ছত্রাককে আবাসস্থলে টিকে থাকতে সাহায্য করে। রাইজয়েডযুক্ত মাইসেলিয়ামকে রাইজোমাইসেলিয়া (rhizomycelium) কোষের গঠন (Cell structure) কিছু নিম্নশ্রেণির ছত্রাক (স্লাইম মোল্ড) ছাড়া অধিকাংশ ছত্রাকের কোষ দুটি অংশে বিভক্ত-
ক.কোষপ্রাচীরঃ কোষপ্রাচীর বিভিন্ন শ্রেণির ছত্রাকের কোষপ্রাচীরে ভিন্নতা দেখা গেলেও অধিকাংশ ছত্রাককোষের কোষপ্রাচীরের উপাদান কাইটিন জাতীয় পদার্থ । এছাড়াও লিপিড, মেলানিন ইত্যাদি পাওয়া যায়। প্রোটোপ্লাস্টকে সংরক্ষণ করাই এর মূল কাজ। এটি পানি ও অন্যান্য দ্রবণের জন্য ভেদ্য।
খ. প্রোটোপ্লাস্টঃ কোষপ্রাচীরের অভান্তরের সমুদয় জীবিত পদার্থকে সমবেতভাবে প্রোটোপ্লাস্ট বলে। কোষঝিল্লি, ইটোপ্লাজম ও নিউক্লিয়াস সহযোগে ছত্রাকের প্রোটোপ্লাস্ট গঠিত।
• কোষঝিল্লি : কোষপ্রাচীরের ভেতরের দিকে অবস্থিত এটি একটি পাতলা জীবিত পর্দা যা কোষপ্রাচীরের সাথে নিবিড়ভাবে সেঁটে থাকে। কোনো কোনো স্থানে কোষঝিল্লিটি ক্ষুদ্র পকেটের আকারে ভাঁজ হয়ে লোমাজোম গঠন করে।
• সাইটোপ্লাজম : কোষঝিল্লির ভেতরের দিকে জেলিসদৃশ পদার্থটির নাম সাইটোপ্লাজম । তরুণ মাইসেলিয়াম ও হাইফার শীর্ষদেশে সাইটোপ্লাজম ঘন দানাদার ও সমস্বত্ব। কিন্তু পরিণত মাইসেলিয়ামে সাইটোপ্লাজম অপেক্ষাকৃত পাতলা ও গহ্বরযুক্ত। সাইটোপ্লাজমের অভ্যন্তরে এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম, মাইটোকন্ড্রিয়া,দেহ গহ্বর ইত্যাদি পাওয়া যায় তবে প্লাস্টিড থাকেনা। কোনো কোনো ছত্রাকের সাইটোপ্লাজমে গলজি বস্তুর অস্তিত্বও প্রমাণিত হয়েছে। ছত্রাকের সাইটোপ্লাজমে সঞ্চিত খাদ্য হিসেবে গ্লাইকোজেন, ডব্লিউটিন, জেল ও চর্বি ইত্যাদি বিদ্যমান।
• নিউক্লিয়াস: ছত্রাকের সাইটোপ্লাজমে এক বা একাধিক গোলাকার বা উপবৃত্তাকার নিউক্লিয়াস থাকে। প্রতিটি নিউক্লিয়াসের একটি নির্দিষ্ট ও সচ্ছিদ্র নিউক্লিয়ার মেমব্রেন আছে। নিউক্লিয়াসের কেন্দ্রীয় অঞ্চলটি অপেক্ষাকৃত ঘন। কোনো কোনো ছত্রাকবিদ এই কেন্দ্রীয় অঞ্চলটিকে নিউক্লিওলাস হিসেবে গণ্য করেন।
Penicillium
Rhizophus
Saprolegnia
Aspergillus
ছত্রাকের জননঃ জননের ভিত্তিতে ছত্রাককে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়, যথা-হলোকার্পিক (holocarpic) ও ইউকার্পিক (eucarpic) ছত্রাক। ছত্রাকের সমগ্র দেহ জনন অঙ্গে পরিণত হলে তাদেরকে হলোকর্পিক ছত্রাক বলে। যেমন-Synchytrium হ পরপক্ষে, অধিকাংশ ছত্রাকের সমগ্র দেহ জনন অঙ্গে পরিণত না হয়ে একাংশ জনন অঙ্গে পরিণত হয়। এবং অবশিষ্ট
অংশ অঙ্গজ দেহ হিসেবেই থেকে যায়, এদেরকে ইউকার্পিক ছত্রাক বলে, যেমন-Sapregnia।
ছত্রাকে তিন ধরনের জনন দেখা যায়- অঙ্গজ, অযৌন ও যৌন। নিচে এদের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো ।
১.অঙ্গজ জননঃ নিচেবর্ণিত পদ্ধতিতে ছত্রাকের অঙ্গজ জনন সম্পন্ন হয়।
ক.খণ্ডায়ন (Fragmentation): এ প্রক্রিয়ায় ছত্রাকের মাইসেলিয়াম খণ্ডিত হয়ে দুই বা ততোধিক অংশে পরিণত হয় এবং উপযুক্ত পরিবেশে প্রতিটি অংশ এক একটি নতুন মাইসেলিয়াম গঠন করে। যেমন- Penicillium,Rhizopus.
খ.মুকুলোদগম (Budding): এসময় মাতৃকোষের প্রাচীরের যেকোন স্থানে স্ফীত হয়ে মুকুল উৎপন্ন করে। নিউক্লিয়াসটি বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াস গঠন করে। কিছু সাইটোপ্লাজমসহ অপত্য নিউক্লিয়াস দুটির একটি মুকুলের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়। মুকুলগুলো মাতৃদেহকোষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নতুন ছত্রাক গঠন করে Saccharomyces বা ঈস্ট ছত্রাকে এরূপ দেখা যায়।
গ.বিভাজনঃ দ্বিভাজন এককোষী ছত্রাকে দেখা যায়। এক্ষেত্রে অঙ্গজ কোষদেহটি সংকোচনের ফলে বা গ্রন্থপ্রাচীর গঠনের MAT মাধ্যমে দুটি অপত্য কোষে বিভক্ত হয়ে যায়। উদাহরণ- Saccharomyces
২.অযৌন জননঃ
একই প্রকার বা বিভিন্ন প্রকার বিশেষ ধরনের কোষ অর্থাৎ স্পোর-এর সাহায্যে ছত্রাকের অযৌন জনন সম্পন্ন হয়। স্পোরগুলো বিভিন্ন নামে পরিচিত হয়। যেমন-
ক.স্পোরাঞ্জিওস্পোরঃ অনেক ছত্রাক থলির মতো স্পোরাঞ্জিয়ামের মধ্যে স্পোর সৃষ্টির মাধ্যমে বংশ বৃদ্ধি করে। এরূপ স্পোরকে স্পোরাঞ্জিওম্পোর বলে স্পোরাঞ্জিওস্পোর দুই ধরনের-
•জুস্পোরঃ স্পোরাঞ্জিয়ামের মধ্যে ফ্ল্যাজেলাযুক্ত সচল স্পোর উৎপন্ন হলে এদেরকে জুম্পোর বলা হয় ছত্রাকে এ ধরনের জুস্পোর সৃষ্টি হয়। যেমন- Phythium. Saprolegnia.
•অ্যাপ্লানোস্পোরঃ স্পোরাঞ্জিয়ামের মধ্যে ফ্ল্যাজেলাবিহীন নিশ্চল স্পোর উৎপন্ন হলে এদেরকে (অ্যাপ্লানোস্পোর বলে) যেমন- Mucor Rhizopus, ইত্যাদি।
খ.কনিডিয়া (Conidia): (হাইফার অগ্রভাগে ব... MAT পার্শ্বে উৎপন্ন নগ্নম্পোরকে কনিডিয়া বলা হয় উন্নত জাতের ছত্রাকে এ ধরনের কনিডিয়া সৃষ্টি হয়। যেমন- Penicillum, Alternaria, Aspergillus ইত্যাদি।
৩.যৌন জননঃ যৌন জনন অন্যান্য জীবের মতো ছত্রাকের যৌন জননের সময় দুটি সুসঙ্গত (compatible) অর্থাৎ পরস্পরের সাথে মিলনে সক্ষম এমন দুটি হ্যাপ্লয়েড নিউক্লিয়াসের (n) মিলন এবং ঐরূপ মিলনের ফলে একটি ডিপ্লয়েড জাইগোট-নিউক্লিয়াসের (2n) উৎপত্তি ঘটে। সাধারণভাবে ছত্রাকের জন্য অঙ্গকে গ্যামেট্যাঞ্জিয়া (gametangia) বলে। যৌন জননে নিম্নলিখিত তিনটি স্বতন্ত্র দশা বা ধাপ দেখা যায়।
ক.প্লাজমোগ্যামিঃ প্রথমে দুটি গ্যামেটের সাইটোপ্লাজমের মিশ্রণ ঘটে এবং নিউক্লিয়াস দুটি কাছাকাছি উদ্ভূত কোষটিকে ডায়কেরিয়ন (n +n) বলে।
খ.ক্যারিওগ্যামিঃ অনুন্নত ছত্রাকে প্লাজমোগ্যামির পরপরই দুটি নিউক্লয়াসের মিলন বা ক্যারিওগ্যামি ঘটে এবং ডিপ্লয়েড (2n) জাইগোট সৃষ্টি হয়। কিছু উন্নত ছত্রাকে ডাইকেরিয়নের নিউক্লিয়াস দুটি বার বার বিভাজিত হয়ে ডায়কেরিয়টিক মাইসেলিয়াম (n +n) সৃষ্টি হয় এবং পরবর্তীতে সুবিধাজনক সময়ে ক্যারিওগ্যামি ঘটে।
গ.মিয়োসিসঃ ক্যারিওগ্যামির ফলে সৃষ্ট জাইগোটে সাথে সাথে বা কিছুকাল বিশ্রামের পর মিয়োসিস ঘটে এবং পুনরায় জীবন চক্রের হ্যাপ্লয়েড (n) অবস্থায় ফিরে আসে। ছত্রাকের যৌনজনন তিনটি প্রক্রিয়ায় ঘটতে পারে-
•আইসোগ্যামিঃ এক্ষেত্রে দুটি গ্যামেট আকার আকৃতিগতভাবে একই রকম; যেমন- ঈস্ট
Synchytrium ইত্যাদি।
•অ্যানআইসোগ্যামিঃ এক্ষেত্রে দুটি ভিন্ন আকার-আকৃতির সচল গ্যামেটের মিলন ঘটে। ছত্রাকে। অ্যানআইসোগ্যামি খুবই কম। উদাহরণ- Allomyces.
•উগ্যামিঃ এ ক্ষেত্রে দুটি গ্যামেট্যাঞ্জিয়া (অ্যান্থেরিডিয়াম এবং উগোনিয়াম) এর সংস্পর্শ ঘটে। নিষেক নালির মাধ্যমে শুক্রাণু উগোনিয়ামে প্রবেশ করে এবং ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয়ে জাইগোট সৃষ্টি করে ।
জল-স্থল-অন্তরীক্ষ এক কথায় জীবের বাসোপযোগী যে কোন পরিবেশে বসবাসকারী অগণিত ছত্রাক আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমাদের জীবনকালে এমন একটি দিনও নেই যেদিন কোন না কোন উপায়ে, প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে আমরা ছত্রাক দ্বারা উপকৃত অথবা ক্ষতিগ্রস্ত না হই। আমাদের পরিবেশে বিপুল সংখ্যায় বসবাসকারী ছত্রাক খুব ধীর গতিতে ও নানাবিধ জৈবিক পরিবর্তনের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ছত্রাকের এই ভূমিকাকে মোটামুটিভাবে দু'ভাগে ভাগ করা যায়, যথা—উপকারী ভূমিকা ও অপকারী ভূমিকা।
ছত্রাকের উপকারী ভূমিকা :
* অধিকাংশ ছত্রাক ব্যাকটেরিয়ার সাথে একত্রে মৃত ও গলিত জৈববস্তুর (উদ্ভিদ ও প্রাণিদেহ) উপর জন্মিয়ে এদের পচন ত্বরান্বিত করে। এরূপ পচনের ফলে ঐসব বস্তু মাটির সাথে সাররূপে মিশ্রিত হয়ে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে ।
* নানা প্রকার ঈস্ট জাতীয় ছত্রাক অর্থাৎ Saccharomyces-এর কয়েকটি প্রজাতি এবং Penicillium- এর কয়েক প্রজাতির সাহায্যে মদ, পাউরুটি, কেক, পনির প্রভৃতি প্রস্তুত করা হয়।*
* সাইট্রিক, গ্লুকোনিক, গ্যালিক, ফিউমারিক, গ্লুটামিক, অক্সালিক প্রভৃতি নানান জৈব এসিড, ভিটামিন এবং কয়েক প্রকার এনজাইম যেমন- ইনভার্টেজ, অ্যামাইলেজ, প্রভৃতি প্রস্তুত করতে কয়েক প্রজাতির ছত্রাক বর্তমানে বহুল পরিমাণে ব্যবহৃত হয়।
*Mucor routi নামক ছত্রাকটিকে শ্বেতসার হতে চিনি প্রস্তুত করতে ব্যবহৃত হয়।
* বিভিন্ন ছত্রাক থেকে বিভিন্ন রকমের জীবাণু প্রতিরোধী (antibiotic) উৎপাদন করা হচ্ছে। ১৯২৯ সালে স্যার আলেকজাণ্ডার ফ্লেমিং সর্বপ্রথম Penicillium notatum নামক ছত্রাক থেকে Penicillin অ্যান্টিবায়োটিক। আবিষ্কার করেন। বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ছত্রাকজনিত রোগ নিরাময়ের জন্য বর্তমানে যেসব জীবাণু-প্রতিরোধী ওষুধ ব্যবহৃত হয় তার অনেকগুলোই ছত্রাকজাত ।
* বর্তমানে নিত্যনতুন অ্যান্টিবায়োটিক যেমন-স্ট্রেপটোমাইসিন, ক্লোরোমাইসিটিন, নিউমাইসিন, অ্যাম্ফিসিলিন, অরিওমাইসিন ইত্যাদি ছত্রাক থেকে প্রাপ্ত। * জৈবিক দমনের জন্য শস্যক্ষেত্রে কীটপতঙ্গের দেহে পরজীবীরূপে বাস করে বিভিন্ন প্রকার ছত্রাক এদের ধ্বংস সাধন করে। এছাড়া মাটি বাহিত জীবাণুদের বিনাশ করতে বিশেষভাবে ছত্রাককে ব্যবহার করা হয়।
* ছত্রাকের ফ্রুটবডি সাধারণতভাবে ব্যাঙের ছাতা বা মাশরুম (Mushrooms), মোরেল (Morels), ট্রাফল (Truffles) প্রভৃতি নামে পরিচিত এবং উচ্চ প্রশংসিত খাদ্যরূপে ব্যবহৃত হয়। এতে প্রচুর শর্করা ও প্রোটিন জাতীয় খাদ্য উপাদান এবং নানান খনিজ লবণ পর্যাপ্ত পরিমাণে বিদ্যমান থাকে ।
* বিভিন্ন প্রজাতির ছত্রাক থেকে ভিটামিন B গ্রুপের বায়োটিন, প্যান্টেথেক এসিড, পিরিডক্সিন, রাইবোফ্ল্যাভিন প্রকৃতি ভিটামিন উৎপাদন করা হয়।
* উপগবেষণাগারে ছত্রাকের ব্যবহার বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে জিনতত্ত্বীয় গবেষণায় বিভিন্ন ছত্রাক ব্যবহৃত হচ্ছে, যথা-Neurospora crassa, Nisitophia প্রভৃতির নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
* Gibberalla fucikurai নামক ছত্রাক থেকে বৃদ্ধি সহায়ক হরমোন জিবেরেলিন উৎপাদন করা হয় ।
* Claviceps purpurea ছত্রাক থেকে ergot তৈরী হয় যা বিশেষ করে সন্তান প্রষণের পর রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
* Aspergillus ছত্রাক ডায়াস্টেজ এবং জৈব এসিড তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়।
* মানুষের যেকোন অঙ্গ ট্রান্সপ্লান্ট করতে মরিকাবাসী ছত্রাক থেকে সাইক্লোস্পোরিন (cyclosporine) ঔষধ তৈরী হয়।
* Aspergillus থেকে স্টেরয়েড পাওয়া যায়, এটি আরথাইটিস নিরাময় করে।
* Penicillium griseofulvum থেকে গ্রিসিওফুলভিন তৈরি করা হয় যা দাদ বা চর্মরোগ নিরাময় করে।
ছত্রাকের অপকারী ভূমিকা (Harmful role):
* উদ্ভিদ দেহের যেসব রোগ হয় তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ ছত্রাকজনিত। ছত্রাকের আক্রমণের ফলে আমাদের উদ্যান-বৃক্ষ, দারু-বৃক্ষ, ফসলী উদ্ভিদ ও ফলমূলের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয় । * ১৯৪২ সালে তৎকালীন বাংলায় মহাদুর্ভিক্ষ হয়েছিল ধানের পাতার বাদামি দাগ রোগের কারণে। এই রোগ। Helminthosporium dryae নামক ছত্রাক দিয়ে সৃষ্টি হয়।
* আলুর বিলম্বিত ধ্বসা (লেট রাইট) রোগের কারণে ১৮৪৩-১৮৪৭ সাল পর্যন্ত আলুর ফলন প্রায় সম্পূর্ণটাই নষ্ট হয়ে যায়, যার ফলে আয়ারল্যাণ্ডে প্রায় দশ লক্ষ লোক মারা যায় এবং বিশ লক্ষ লোক দেশ ছেড়ে চলে যায়।
*Se Phytophthora infestans নামক ছত্রাক দ্বারা আলুর বিলম্বিত ধ্বসা রোগ হয় ।
ছত্রাকের কিছু কিছু প্রজাতি মানুষ ও গৃহপালিত পশু ও অন্যান্য প্রাণিদেহে নানাবিধ রোগ সৃষ্টি করে।
* বিভিন্ন প্রকার ছত্রাকের আক্রমণে মানুষের দাদ, খুসকি, একজিমা, অ্যালার্জি প্রভৃতি রোগ সৃষ্টি হয়। মানুষের। দেহে ব্রঙ্কোমাইকোসিস নামক রোগ সৃষ্টি করে Absidia corymbifera নামক ছত্রাক।
* Microsporum এর আক্রমণে চুল উঠে যায় এবং মাথায় টাক পড়ে।
*Saprolegnia মৃতজীবী ছত্রাক হলেও কখনো কখনো সুবিধাবাদী পরজীবী হিসেবে রুই, কাতলা, মৃগেল "প্রভৃতি মাছের দেহে বাস করে। এর আক্রমণে মাছ অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং মারা যায়।
*নানা ধরনের ছত্রাক বিশেষ করে Mucor, Rhizopus, Aspergillus, Penicillium শাকসবজি, ফল-মূল, জ্যাম, জেলী, আচার, রান্না করা খাদ্য সামগ্রী নষ্ট করে দেয় ।
* বিভিন্ন প্রকার মৃতজীবী ছত্রাকের আক্রমণে চামড়া ও চামড়ার তৈরি দ্রব্যাদি, বইপত্র, মূল্যবান দলিলপত্র, ফটোগ্রাফ, দেয়ালে ঝুলানো মূল্যবান চিত্রকর্ম সবই নষ্ট হতে পারে।
*বর্ষাকালে কয়েকটি ছত্রাক প্রজাতির আক্রমণের কারণে ভেজা কাপড়-চোপড়, জুতা, চামড়ার সুটকেস ইত্যাদির উপর চিঠি পড়ে ঐ সব দ্রব্য ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে।
* কাঠ ও কাঠের আসবাব ছত্রাকের আক্রমণে নষ্ট হয়।
Agaricus-এর শ্রেণিবিন্যাস (Classification)
Kingdom: Fungi
Division: Basidiomycota
Class: Basidiomycetes
Order: Agaricales
Family: Agaricaceae
Genus: Agaricus
বাংলাদেশ থেকে নথিভুক্ত প্রজাতি হলো A. bisporus (Leg.) Sing. এটি হোয়াইট বাটন মাশরুম নামে পরিচিত।
আবাসস্থল (Habitat):
Agaricus ভেজা মাটিতে, মাঠে-ময়দানে বা গোবর, খড় ইত্যাদি পচনশীল জৈব পদার্থের উপর জন্মায়। এরা মৃতজীবী (saprophytic)। সাধারণত এদের বায়বীয় অংশ খাড়া হয়ে উপরে বৃদ্ধি পায় এবং পরিণত অবস্থায় অনেকটা ছাতার মতো দেখায়। তাই এদেরকে ব্যাঙের ছাতা বলা হয়।মাইসেলিয়াম থেকে ছাতার ন্যায় বায়বীয় অংশ সৃষ্টিকে ফ্রুকটিফিকেশন (fructification) বলা হয় এবং ঐ বায়বীয় অংশকে Agaricus উদ্ভিদের ফ্রুট বডি (fruit body বা fruiting body) বলা হয়। এরা মাশরুম (mushroom) নামেও পরিচিত। অনেক সময় লনে (Lawn-খালি জায়গা) অনেকগুলো মাশরুম বৃত্তাকারে বা চক্রাকারে অবস্থান করতে দেখা যায়। এরূপ অবস্থাকে পরীচক্র (fairy ring) বলা হয়।
গোজনন অংশ তথা ফ্রুট বডি (fruiting body) মাটি বা আবাদ মাধ্যম থেকে উপরে বাড়তে থাকে। পরিণত অবস্থায় এর দুটি অংশ থাকে। কাণ্ডের ন্যায় অংশকে স্টাইপ (stipe) বলা হয় এবং উপরের দিকে ছাতার ন্যায় অংশকে পাইলিয়াস (pileus) বলা হয়। তরুণ অবস্থায় পাইলিয়াসটি ভেলাম (Vellum) নামক একটি পাতলা ঝিল্লিময় আবরণে আবৃত থাকে। পাইলিয়াসের নিচের দিকে ঝুলন্ত অবস্থায় পর্দায় ন্যায় অংশকে গিল (gills) বা ল্যামিলী (lamellae) বলে। স্টাইপের মাথায় একটি চক্রাকার অংশ থাকে যাকে অ্যানুলাস (annulus) বলে। ল্যামিলীতে অসংখ্য ব্যাসিডিয়া (basidia) সৃষ্টি হয়। প্রতিটি ব্যাসিডিয়াম উর্বর এবং ব্যাসিডিয়ামের শীর্ষে আঙুলের ন্যায় চারটি অংশের মাথায় একটি করে ব্যাসিডিয়োষ্পোর (basidiospore) উৎপন্ন হয়। স্পোরগুলো অনুকূল পরিবেশে অঙ্কুরিত হয়ে নতুন মাইসেলিয়াম তৈরি করে।
গিলের অন্তর্গঠন (Gill’s infrastructure)
গিল পাতলা পাতের মতো। গিলের অন্তর্গঠন বেশ জটিল প্রকৃতির। প্রস্থচ্ছেদ করলে একে তিনস্তরে বিভক্ত দেখা যায়, যথা-ট্রমা, সাবহাইমেনিয়াম ও হাইমেনিয়াম।
ট্রমা (Trama) : গিলের কেন্দ্রীয় বন্ধ্যা অংশকে ট্রমা বলে। ঢিলাভাবে স্টেরিগমা , জড়াজড়ি করে সজ্জিত গৌণ মাইসেলিয়াম দিয়ে ট্রমা অংশ গঠিত। এর হাইমেনিয়াম কোষগুলো ডাইক্যারিওটিক।
সাবহাইমেনিয়াম (Subhymenium) : ট্রমার উভয় দিকের অংশকে সাব-হাইমেনিয়াম সর্বহাইমেনিয়াম বলে। কোষগুলো আকারে ছোট, গোলাকার এবং ২-৩ নিউক্লিয়াসবিশিষ্ট। এরূপ কোষবিন্যাসকে প্রোজেনকাইমা বলে। এ অঞ্চল থেকে ব্যাসিডিয়াম উৎপন্ন হয়ে থাকে।
হাইমেনিয়াম (Hymenium) : গিলের উভয় পাশের বহিস্থ স্তরকে হাইমেনিয়াম বলে। উর্বর এ স্তরের কোষগুলো সাবহাইমেনিয়াম হতে উথিত তলের সাথে লম্বভাবে সাজানো থাকে। এ স্তরেই গদাকার ব্যাসিডিয়াম উৎপন্ন হয়।
ব্যাসিডিওকার্প (Basidiocarp) : ব্যাসিডিওমাইসিটিস শ্রেণির ছত্রাকের ফুট বডিকে ব্যাসিডিওকার্প বলে। কাজেই Agaricus-এর ফুট বডিকেও ব্যাসিডিওকার্প বলা হয়। Agaricus-এর ব্যাসিডিওকার্প গোড়ায় দণ্ডের ন্যায় স্টাইপ, স্টাইপের মাথার দিকে অ্যানুলাস এবং মাথায় ছাতার ন্যায় পাইলিয়াস নিয়ে গঠিত। এছাড়াও এতে আছে গিল বা ল্যামিলী, গিলে অসংখ্য ব্যাসিডিয়া এবং প্রতিটি ব্যাসিডিয়ামের মাথায় ৪টি করে ব্যাসিডিওস্পোর। ভূ-নিম্নস্থ মাইসেলিয়াম অংশ বাদে উপরে ব্যাঙের ছাতার ন্যায় অংশটুকুই Agaricus-এর ব্যাসিডিওকার্প।
অঙ্কুরোদগম (Germination): অনুকূল পরিবেশে ব্যাসিডিওস্পোর অঙ্কুরিত হয়ে মনোক্যারিওটিক প্রাথমিক মাইসেলিয়াম গঠন শুরু করে। সোমাটোগ্যামির মাধ্যমে প্রাথমিক মাইসেলিয়াম হতে গৌণ মাইসেলিয়াম উৎপন্ন হয়। পরে গৌণ মাইসেলিয়ামের সহায়তায় সৃষ্ট রাইজোমর্ফ দিয়ে প্রতিকূল অবস্থা অতিক্রম করে।
পুষ্টি (Nutrition): জৈব পদার্থ শোষণ করে পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে।
জনন (Reproduction): Agaricus প্রধানত যৌন জনন প্রক্রিয়ায় জননকার্য সম্পন্ন করে। যৌন স্পোর উৎপাদনকারী অঙ্গের নাম ব্যাসিডিয়াম (basidium) এবং স্পোর এর নাম ব্যাসিডিওস্পোর।
Agaricus-এর অর্থনৈতিক গুরুত্বঃ
১. খাদ্য হিসেবে Agaricus এর দুটি প্রজাতি A. campestris এবং A bisporus ইউরোপ, আমেরিকার বিভিন্ন দেশ এবং এশিয়ার চীন, জাপান, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, বামা, কোরিয়া প্রভৃতি দেশে মানুষের খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশে (মানিকগঞ্জ ও সাভার) Volsariella ও Pleurons গণভুক্ত কয়েকটি মাশরুম প্রজাতির চাষ হচ্ছে। পুষ্টিগত দিক থেকে A. Zampestris ও A. bisporus (A prammescens ) অত্যন্ত উঁচু মানের এবং সুস্বাদু। টাটকা মাশুরুমে নানা ধরনের ভিটামিন পাওয়া যায়। যেমন, থায়ামিন, রিবোফ্লাবিন, Vit-C, D, K, নিয়ামিন, প্যান্টোথেনিক এসিড ইত্যাদি।
২. শিল্প ও বাণিজ্যে : Agaricus এর চাষ লাভজনক বলে পাশ্চাত্যে বেশ কয়েকটি নামী শিল্পসংস্থা গড়ে উঠেছে। যা ৩. মৃত্তিকার পুষ্টি বৃদ্ধিতে : Agaricus মৃতজীবী; তাই বিভিন্ন জটিল বস্তুকে ভেঙ্গে মৃত্তিকার পুষ্টি বৃদ্ধি করে। কুটির শিল্পে পরিণত হয়েছে।
৪. ওষুধি গুণাবলি
ক. এতে প্রোটিন, শর্করা, চর্বি, ভিটামিন, খনিজ লবণ এমন (Ca, K, P. Fe 3 Cu) সমন্বয়ে আছে যা শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে উন্নত করে। ফলে গর্ভবতী মা ও শিশুরা নিয়মিত খেলে দেহের রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
খ. এতে আঁশ বেশি থাকায় এবং চর্বি ও শর্করা কম থাকায় ডায়াবেটিস রোগীর আদর্শ খাবার। এতে ইরিটাডেনিন, লোভাস্টাটিন ও এনটাডেনিন থাকে যা শরীরের কোলেস্টেরল কমানোর অন্যতম উপাদান । তাই নিয়মিত খেলে হৃৎরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ নিরাময় হয়। ক্যান্সার ও টিউমার প্রতিরোধ করে।
গ. এতে প্রচুর এনজাইম আছে যা হজমে সহায়ক, রুচি বর্ধক এবং পেটের পীড়া নিরাময়ক। ৫. বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন : পৃথিবীর অনেক দেশে মাশরুম অত্যন্ত দামী খাবার। ব্যাপকভাবে মাশরুমের উৎপাদন ও রপ্তানির মাধ্যমে আমরা মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারি।
অপকারী ভূমিকাঃ
১. বিনাশী কার্য : Agaricus কাঠের গুড়ি, বাঁশ, খড় প্রভৃতির ক্ষতি করে।
২. জৈব বস্তুর ঘাটতি : Agaricus যেখানে জন্মায়, সেখানে জৈববস্তুর অভাব দেখা যায় ।
৩. বিষাক্ততা : কতিপয় প্রজাতি, যেমন Agaricus xanthodermus খুবই বিষাক্ত। তাই এসব ধরনের মাশরুম খেলে মানুষ ও প্রাণীর মৃত্যু ঘটতে পারে।
বিষাক্ত মাশরুম চেনার উপায়ঃ
i. অত্যন্ত উজ্জ্বল বর্ণের প্রজাতিগুলো বিষাক্ত।
ii. বিষাক্ত প্রজাতিগুলোর ব্যাসিডিওস্পোর বেগুনী বর্ণের।
iii. ঝাঁঝালো ও অম্লযুক্ত প্রজাতিগুলো বিষাক্ত
iv. কাঠের উপর জন্মানো প্রজাতিগুলো বিষাক্ত।
v. বিষাক্ত মাশরুম কখনো প্রখর রোদে জন্মায়না।
ছত্রাক ঘটিত রোগঃ ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট রোগ যা মাইকোসিস নামে পরিচিত। সাধারণত ছত্রাক জাতীয় রোগ গুলো ছোয়াচে হয়ে থাকে। আলু গাছের বিলম্বিত ধ্বসা রোগ, মানুষের দেহে ছোয়াচে দাদ রোগ, চুলে খুশকি ইত্যাদি ছত্রাকজনিত রোগ।
গোল আলুর বিলম্বিত ধ্বসা রোগ (Late Blight disease of Potato):
ধ্বসা (Blight) বলতে বুঝায়, কোন রোগের কারণে যখন কোন গাছের মাটির উপরের অংশ দ্রুত বিবর্ণ হয়ে মরে যায় । গোল আলু গাছে এ রোগ হলে আলু গাছের মাটির উপরের অংশ দ্রুত মরে যায় বলেই এ ধরনের নাম দেওয়া হয়েছে আলুর এ রোগটিকে । দুধরনের ব্লাইট রোগ হয়ে থাকে; একটি হলো লেট ব্লাইট, অপরটি হলো আর্লি ব্লাইট। (আর্লি ব্লাইট Alternaria solani দিয়ে হয়ে থাকে)। আলু গাছের সবচেয়ে ক্ষতিকারক রোগ হলো লেট ব্লাইট, যা বাংলায় বিলম্বিত ধ্বসা রোগ হিসেবে পরিচিত। এ রোগের কারণেই ১৯৪৫ সালে আয়ারল্যান্ডে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় যা ইতিহাস প্রসিদ্ধ আইরিশ দুর্ভিক্ষ নামে পরিচিত। আমাদের দেশে রংপুর, বগুড়া ও রাজশাহী জেলায় যথেষ্ট আলুর চাষ হয় । এসব অঞ্চলে এ রোগটি প্রতিবছর ফসলের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
রোগের বিস্তার : রোগাক্রান্ত আলু দ্বারাই রোগের প্রাথমিক সংক্রমণ ঘটে। জমিতে আলু লাগানোর পর চারা গাছ বের হওয়ার সাথে সাথে আক্রান্ত আলুর অংশ থেকে সুপ্ত মাইসেলিয়াম উজ্জীবিত হয়ে উঠে। ছত্রাকের হাইফি থেকে উৎপন্ন হস্টোরিয়া (haustoria) নামের সরু পার্শ্বীয় উপবৃদ্ধি (outgrowth) পোষক কোষপ্রাচীর ভেদ করে ভেতরে ' প্রবেশ করে এবং প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য শুষে নেয়। এরপর অনুকুল পরিবেশে মাইসেলিয়ামগুলো পত্ররন্ধ্র ভেদ করে কনিডিওফোরকে বাইরে পাঠায়। এই কনিডিওফোরে কনিডিয়া উৎপন্ন হয় এবং পানি ও বাতাসের সাহায্যে বিস্তৃত হয়েনতুন সুস্থ আলু গাছকে আক্রমণ করে ধ্বসা রোগ সৃষ্টি করে। জমিতে যদি কোন রোগাক্রান্ত আলু না থাকে তাহলেও সে জমির গাছ এ প্যাথোজেন দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। কারণ অন্য কোন স্থানের রোগাক্রান্ত গাছ হতে কনিডিয়া বাতাসের মাধ্যমে বাহিত হয়ে ক্রমে সুস্থ আলু গাছের পাতায় পড়ে এবং রোগ সৃষ্টি করে ।
রোগের কারণঃ
(Phytophthora wfestans) নামক ছত্রাকের আক্রমণে আলুর বিলম্বিত ধ্বসা রোগ সৃষ্টি হয় । ছত্রাকটি Phycomycetes শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। ছত্রাকের দেহটি সিনোসাইটিক মাইসেলিয়াম । এরা পোষক দেহের আন্তঃকোষীয় ফাকে অবস্থান করে এবং হস্টোরিয়া নামের বিশেষ হাইফার মাধ্যমে পোষকে বংশবিস্তার ঘটে।
রোগের লক্ষণঃ
সাধারণত বীজ বপনের মাস দুই পরে রোগের লক্ষণ প্রকাশিত হতে থাকে । লক্ষণগুলো নিম্নরূপ-
১. প্রথমে পাতায় সবুজ-ধূসর বর্ণের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দাগ দেখা যায় যেগুলো পরে অপেক্ষাকৃত বড় হয়ে বাদামি বর্ণের হয় এবং অবশেষে কালচে বাদামি বর্ণ ধারণ করে। ফুল আসার সময় বয়স্ক পাতার অগ্রভাগে বা কিনারায় লক্ষণ প্রথম প্রকাশিত হয়।
২. আক্রান্ত স্থানে মখমলের মতো আস্তরণ সৃষ্টি হয়। নিম্নত্বক অণুবীক্ষণযন্ত্রে পর্যবেক্ষণ করলে পত্ররন্ধ্রপথে কনিডিওফোর বেরুতে দেখা যায়।
৩. আর্দ্র আবহাওয়ায় সমস্ত আক্রান্ত পাতা মরে যায় এবং রোগ পাতা থেকে কান্ডে পৌঁছে।
৪. রোগ প্রকট রূপে দেখা দিলে মাটির উপর গোটা গাছটাই মরে কালচে-বাদামি হয়ে যায়।
৫. উৎকট দুর্গন্ধযুক্ত পচনের সৃষ্টি হয়।
৬. ছত্রাকের আক্রমণ তীব্র হলে মাটির নিচে আলুও আক্রান্ত হতে পারে, আক্রান্ত অংশের খোসায় লালচে-বাদামি- কালো ছোপ দেখা যায়।
৭. ফসল তোলার সময় অথবা গুদামজাত করার সময় সাধরণত আলুর মধ্যে এ রোগের বিস্তার ঘটে। আর্দ্র পরিবেশে আক্রান্ত আলুগুলো পঁচতে শুরু করে।
রোগ দমন/ প্রতিকারঃ
নিম্নবর্ণিত উপায়ে গোল আলুর এই ছত্রাকঘটিত রোগটি প্রতিকার করা সম্ভব।
১. বর্ষা আরম্ভ হওয়ার আগেই শুকনো আলু রোগমুক্ত এলাকা থেকে বীজের জন্য সংগ্রহ করে পরবর্তী বছরের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে।
২. আলু চাষের জন্য সুস্থ ও জীবাণুমুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে। কোল্ডস্টোরেজ-এ রাখা বীজ ব্যবহার অপেক্ষাকৃত নিরাপদ।
৩. পাতা থেকে আলুতে যাতে রোগ সংক্রমিত হতে না পারে সেজন্য আলু সংগ্রহের আগে সাইনক্স বা অ্যামোনিয়াম থায়োসায়ানেট ঔষুধ ছিটিয়ে গাছের পাতা ঝড়িয়ে ফেলতে হবে।
৪. জমি থেকে আলু ফসল উঠানোর পর পরিত্যক্ত আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
৫. একই জমিতে প্রতি বছর আলু চাষ না করে ২/১ বছর পর পর চাষ করলে রোগের বিস্তার কম হবে।
৬. এলাকা ও জমির ধরণ অনুযায়ী জাত নির্বাচন করতে হবে। স্থানীয় জাত ফলন কম হলেও সাধারণত রোগ প্রবণ নয়।
৭. ছত্রাক প্রতিরোধক্ষম জাত লাগাতে হবে।
৮. গাছের গোড়ায় মাটি উঁচু করে তুলে দিলে মাটির নিচের আলুকে অনেকাংশে ছত্রাকমুক্ত করা যায়।
৯. রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথেই ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। প্রথমেই Bordaux mixture; (কপার সালফেট, লাইম ও পানি) ছিটিয়ে বা কপার-লাইম জাস্ট প্রয়োগ করে রোগের বিস্তার রোধ করা যায়।
দাঁদরোগঃ দাঁদরোগ বা ডার্মাটোফাইটোসিস এক ধরনের ছোঁয়াচে ছত্রাকঘটিত চর্মরোগ। আক্রমনের জন্য দায়ী ছত্রাক ত্বকে উপস্থিত ক্রোটিন (Keratin) নামক প্রোটিন আহার করে। মধ্যখানে দৃশ্যমান সুস্থ ত্বকসম্পন্ন চুলকানিময়, বৃত্তাকার ফুসকুড়ি (rash)-র উপস্থিতি দ্বারা দাপ শনাক্ত করা যায়। ত্বকে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বৃত্তাকার এই উপসর্গের জন্য ওয়ার্স (ring worm) নামকরণ করা হয়েছে (যদিও এটি worm দ্বারা সংঘটিত রোগ নয়)। দাদ রোগ সব বয়সের গ্রহেরই হতে পারে, তবে শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। শরীরের বিভিন্ন স্থানে এর সংক্রমণ ও বংশবৃদ্ধির ফলে এ তার সৃষ্টি হয়।
রোগের কারণ : তদি ছত্রাকঘটিত রোগ। উদ্ভিদ পরজীবী দ্বারা সংঘটিত হয় বলে চিকিৎসাশাস্ত্রে একে Tinea বলে। আকাশে ক্ষেত্রেই Trichophyton (T. rubrihi T. verrucosum) নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে। তাই Tinea trichophytina বা Trichophytosis নামেও পরিচিত। এছাড়া Microsporum (M.cans), alermophyton (E. floccosum)) গণের ছত্রাক দিয়েও দাদরোগ হতে পারে।
রোগের সংক্রমণ : সাধারণত ঘামে ভেজা শরীর, অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন শরীর, দীর্ঘ সময় ভেজা থাকে এমন শরীর, দিন। সাধারণত আক্রান্ত হওয়ার ৩-৫ দিন পর রোগ লক্ষণ প্রকাশ পায়। দেহের যে কোনো অংশেই দাদরোগ পারে, তবে মুখমণ্ডল এবং হাতে অধিক দেখা যায়। ঊরু, মাথার খুলি, নখ ইত্যাদিও আক্রান্ত হয়। মাথার খুলির রোগ অপেক্ষাকৃত মারাত্মক। আক্রান্ত স্থানের নামানুসারে ডাক্তারি পরিভাষায় দাদরোগটি ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত।
রোগের লক্ষণঃ
* চামড়ায় ছোট ছোট লাল বৃত্তাকার ফুসকুড়ি (rash) দেখা যায়।
* আক্রান্ত স্থানে এটি প্রায়শই রিং-এর মত গঠন সৃষ্টি করে। মাঝে মাঝে লাল ক্ষতের সৃষ্টি হয়; ক্ষতের সুনির্দিষ্ট।
* কখনও কখনও ত্বকে প্রচণ্ড চুলকানি হয়। চুলকানোর পর আক্রান্ত স্থানে জ্বালা হয় এবং আঠালো রস বেরোয়।
* মাথায় হলে স্থানে স্থানে চুল উঠে যায়, নখে হলে দ্রুত নখের রং বদলায় এবং শুকিয়ে খন্ড খন্ড হয়ে ভেঙ্গে যায়।
প্রতিকারঃ
* চামড়া পরিষ্কার ও শুষ্ক রাখতে হবে।
* সুতির মোজা ও অন্তর্বাস ব্যবহার করতে হবে। অন্যকারো ব্যবহৃত পোষাক, তোয়ালে, চিরুনী ব্যবহার করা যাবে না।
* গোসলের পর ভালোভাবে শরীর মুছতে হবে। পোশাক ও অন্তর্বাস যথাসম্ভব ঢিলেঢালা পড়তে হবে।
* বিছানার তোষক, চাদর ও কাপড় কিছুদিন পরপর
পরিষ্কার করতে হবে।
* মাথার ত্বকে দাদে আক্রান্ত ব্যক্তির চিরুনী, কাঁচি জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।
* পায়ের আঙ্গুলে আক্রমণ এর ক্ষেত্রে আক্রান্ত স্থানে ছত্রাকনাশক পাউডার বা ক্রীম যাতে Miconazole, Clotrimazolo-এর মত উপাদান আছে। এগুলো লাগানো যেতে পারে।
* এমন কাপড় পরা উচিত নয় যা আক্রান্ত স্থানে ঘসা লাগে ও অস্বস্তি বোধ হয় । আক্রান্ত হলে প্রত্যেকদিন রাতের কাপড় ও বিছানা পরিষ্কার করতে হবে। - আক্রমণ বেশি হলে ডাক্তারের পরামর্শে ছত্রাকনাশক ক্রিম ব্যবহার ও পিল সেবন করা যেতে পারে।
লাইকেন – শৈবাল ও ছত্রাকের সহাবস্থানঃ
উদ্ভিদজগতে এরা পৃথক রাজ্যের বাসিন্দা হলেও প্রকৃতিতে শৈবাল ও ছত্রাককে একই সাথে সিমবায়োটিক সহাবস্থানে দেখা যায়। শৈবাল ও ছত্রাক মিলিতভাবে সম্পূর্ণ পৃথক ধরনের একজাতীয় উদ্ভিদের সৃষ্টি করে যাকে বলা হয় লাইকেন। লাইকেন হলো শৈবালতুল্য ছত্রাক বিশেষ। লাইকেন স্বয়ংসম্পূর্ণ, বিষমপৃষ্ঠ, থ্যালয়েড, অপুষ্পক উদ্ভিদ। সারা পৃথিবীতে প্রায় ৪০০টি গণ এবং ১৭,০০০ লাইকেন প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। দুটি ভিন্ন প্রজাতির জীবের মধ্যে যখন এমন সম্পর্ক স্থাপিত হয় যে তাদের ঘনিষ্ঠভাবে সহাবস্থানের ফলে একে অন্যের নিকট হতে উপকৃত হয় তখন তাদের এ ধরনের সম্পর্ককে মিথোজীবিতা (symbiosis) বলে।
লাইকেনের বাসস্থানঃ
লাইকেন এমন একটি সম্প্রদায় যারা এমন সব পরিবেশে জন্মাতে পারে, যেখানে অন্য আর কোনো জীব বেঁচে থাকতে পারে না। যেমন- অনুর্বর, বন্ধ্যা, বালু বা পাথরের মতো আবাসে এরা স্বাচ্ছন্দ্যে জন্মাতে পারে। এরা গাছের বাকল, সজীব পাতা, বন্ধ্যা মাটি, পাকা দেয়াল, ক্ষয়প্রাপ্ত কাঠের গুড়ি ইত্যাদি বস্তুর উপর জন্মে থাকে। তুন্দ্রা অঞ্চল, মরু অঞ্চল, নীরস পর্বতগাত্রসহ সমস্ত প্রতিকূল অবস্থানে এরা জন্মাতে পারে। তাই লাইকেনকে বিশ্বজনীন উদ্ভিদ বলা হয়।
লাইকেনের বৈশিষ্ট্যঃ
লাইকেন একটি দ্বৈত সংগঠন। কারণ একটি শৈবাল ও একটি ছত্রাক সদস্য মিলিতভাব এ সংগঠন তৈরি করে।
*ছত্রাক থ্যালাসের কাঠামো তৈরি করে এবং কাঠামোর ভেতরে শৈবাল আবৃত অবস্থায় থাকে। শৈবাল থ্যালাস এর ৫-১০% ভর বহন করে।
*আকৃতিগতভাবে লাইকেন থ্যালয়েড, চ্যাপ্টা, বিষমপৃষ্ঠ অথবা শাখা-প্রশাখা যুক্ত হয়।
*এরা অধিকাংশই ধূসর বর্ণের তবে সাদা, কালো, কমলা, হলুদ ইত্যাদি বর্ণের হয়ে থাকে।
*লাইকেনের উভয় জীবে অঙ্গজ ও অযৌন জনন ঘটে। কিন্তু যৌন জনন শুধুমাত্র ছত্রাক সদস্যের ঘটে।
লাইকেন অনুর্বর বন্ধ্যা মাধ্যমেও জন্মে, যেখানে অন্য কোন জীব সম্প্রদায় জন্মাতে পারে না।
*থ্যালাসের নিচের দিকে রাইজয়েডের মতো রাইজাইন থাকে, যা দিয়ে পানি শোষণ করে।
*এরা স্বভোজী তাই স্বয়ংসম্পূর্ণ।
*কঠিন শিলাতেও মাটি গঠনে এরা অগ্রদূত হিসেবে ভূমিকা পালন করে।
*এরা বায়ুদূষণের প্রতি উচ্চমাত্রায় সংবেদনশীল।
লাইকেনের গঠন এবং ছত্রাক ও শৈবালের পারস্পরিক নির্ভরশীলতাঃ
ক.লাইকেন এর বাহ্যিক গঠনঃ
লাইকেন সমাঙ্গদেহী, এদের অধিকাংশই ধূসর বর্ণের; তবে সাদা, কমলা-হলুদ, সবুজ, পীতাভ-সবুজ অথবা কালো ইত্যাদি বর্ণের। এরা অত্যন্ত ক্ষুদ্রাকার হতে কয়েক ফুট পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে। একটি লাইকেন দুটি জীবীয় উপাদান নিয়ে গঠিত। একটি শৈবাল যাকে ফটোবায়োন্ট (photobiont) বলে। এরা নীলাভ-সবুজ শৈবাল বা সবুজ শৈবালের অন্তর্ভুক্ত। অপরটি ছত্রাক যাকে মাইকোবায়োন্ট (mycobiont) বলে। এরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অ্যাসকোমাইসিটিস শ্রেণির এবং কিছু কিছু ব্যাসিডিওমাইসিটিস শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। লাইকেনে শৈবাল ও ছত্রাক উভয়ই উপকৃত হয় এবং কেউ কারও অপকার করে। এরূপ উপকার ভিত্তিক সম্পর্ককে মিথোজীবিতা বা অন্যোন্যজীবিতা (symbiosis) বা মিউচুয়ালিজম (mutualism) বলে।
খ.লাইকেনের অন্তর্গঠনঃ
লাইকেনকে প্রস্থচ্ছেদ করলে একাধিক গঠনগত স্তর দৃষ্টি গোচর হয়। একটি ফোলিয়োজ লাইকেনের অন্তর্গঠন নিম্নরূপ:
•উর্ধ্ব কর্টেক্সঃ ঘন সন্নিবেশিত ছত্রাকীয় হাইফি দ্বারা এই স্তর গঠিত। এ স্তরে সাধারণত ফাক থাকে না, থাকলেও মিউসিলেজ দ্বারা পূর্ণ থাকে।
•শৈবাল স্তরঃ এই স্তরে ছত্রাকের হাইফির ফাঁকে ফাঁকে শৈবাল অবস্থিত। এই স্তরটি সংক্ষিপ্ত। একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির লাইকেনে শুধু এক ধরনের শৈবালই থাকে। পূর্বে এ স্তরকে গনিডিয়াল স্তর বলা হতো। কতকগুলো প্রজাতিতে ছত্রাকের হাইফি। হতে শৈবালের কোষে হস্টোরিয়া প্রবেশ করে।
•নিম্ন কর্টেক্সঃ মেডুলার নিচে ঘন সন্নিবেশিত ছত্রাকীয় হাইফি দ্বারা এই স্তর গঠিত। এই স্তরের নিম পৃষ্ঠে বহু এককোষী রাইজাইন (রাইজয়েড তুল্য) থাকে যা লাইকেনকে নির্ভরশীল বস্তুর (বৃক্ষের বাকল, পাথর ইত্যাদি) সাথে আটকিয়ে রাখে এবং খাদ্যরস শোষণ করতে রাইজাইন সাহায্য করে। রাইজাইন হলো দেহের নিমাংশে চুলের ন্যায় একটি অঙ্গ, যা । মূলের মতো কাজ করে থাকে।
•মেডুলাঃ অত্যন্ত ফাকা ফাঁকাভাবে অবস্থিত ছত্রাকীয় হাইফি দ্বারা এই স্তর গঠিত। এই স্তর অপেক্ষাকৃত পুরু। হাইফি থ্যালাসের প্রান্তের দিকে বেশ পাতলা কিন্তু কেন্দ্রীয় অঞ্চলে ঘনভাবে সন্নিবিষ্ট। শৈবাল স্তরের নিচে এটি অবস্থিত। এ অঞ্চলের হাইফির শাখা-প্রশাখা বিভিন্ন দিকে বিস্তৃত।
লাইকেনে শৈবাল যেভাবে উপকৃত হয়ঃ
ছত্রাক নিজ দেহে আশ্রয়দানের বিনিময়ে শৈবাল কর্তৃক উৎপাদিত খাদ্য হস্টোরিয়ামের সাহায্যে গ্রহণ করে বেঁচে থাকে অর্থাৎ শৈবালের প্রস্তুতকৃত খাদ্য উভয়েই ভাগ করে গ্রহণ করে। ছত্রাকের শারীরবৃত্তীয় কাজের ফলে সৃষ্ট বর্জ্য ও জলীয়বাষ্প দেহ থেকে অপসারণের জন্য ছত্রাককে কোনো ধরনের শক্তির অপচয় করতে হয় না। লাইকেনে ছত্রাকের চেয়ে শৈবালের গুরুত্ব অনেক বেশি। কারণ লাইকেনে ছত্রাক সদস্য এককভাবে বেঁচে থাকতে পারে না। কিন্তু শৈবাল সদস্য এককভাবে বেঁচে থাকতে পারে। লাইকেনে শৈবালের চেয়ে ছত্রাক বেশি সুবিধা ভোগ করে এবং অন্যদিকে শৈবালটি ছত্রাকের কৃতদাস হিসেবে অবস্থান করে বলে কোনো কোনো উদ্ভিদবিজ্ঞানী এরূপ সহাবস্থানকে বিশেষ ধরনের মিথোজীবিতা বা হেলেটিজম (helotism) বলে আখ্যায়িত করেছেন।
অধিকাংশ লাইকেনের ক্ষেত্রে ছত্রাক সদস্যটি শৈবাল কোষের অভ্যন্তরে হস্টোরিয়া নামক শোষক অণুসূত্র প্রেরণ করে পুষ্টি সংগ্রহ করে বলে এরূপ সহাবস্থানকে আংশিক পরজীবিতা বলে উল্লেখ করেছেন।
লাইকেনের জননঃ
লাইকেন অঙ্গজ, অযৌন এবং যৌন উপায়ে বংশবৃদ্ধি করে থাকে। থ্যালাসের খণ্ডায়ন (fragmentation) ও ক্রমাগত মৃত্যু ও পচন (progressive death & decay) প্রক্রিয়ায় লাইকেনের অঙ্গজ জনন ঘটে থাকে। সোরেডিয়া (Soredia, একবচনে-Soredium) ও ইসিডিয়া (Isidia, একবচনে- Isidium) এর পিকনিডিওস্পোরের মাধ্যমে। অযৌন জনন হয়ে থাকে। সোরেডিয়াম হলো একটি শৈবালকে ছত্রাক দ্বারা চারদিক থেকে ঘিরে থাকা ক্ষুদ্রাকার দেহ যা বাতাসে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং উপযুক্ত পরিবেশে লাইকেন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
ইসিডিয়াম হলো লাইকেনের উধ্ব কর্টেক্স দ্বারা আবৃত, ক্ষুদ্রাকার, সরল বা শাখান্বিত প্যাপিলির ন্যায় অযৌন রেণু যা বদ্ধিপ্রাপ্ত ও রূপান্তরিত হয়ে লাইকেন গঠন করে। পিকনিডিয়া (Pycnidia) হলো ফ্লাস্কের ন্যায় গঠনযুক্ত অংশ যারা মূলত লাইকেনের কিছু ছত্রাক দেহে (যেমন- Cladonia sp.) গঠিত হয়। পিকনিডিয়ার অভ্যন্তরে পিকনিডিওস্পোর গঠিত হয়। পিকনিডিওস্পোর অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে নতুন ছত্রাক অণুসূত্র গঠন করে। নতুন গঠিত ছত্রাক অণুসূত্র উপযুক্ত পরিবেশে শৈবালের সংস্পর্শে এলে নতুন লাইকেন গঠন করে।
লাইকেনে যৌন জনন মূলত ছত্রাক দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকে। অ্যাস্কোলাইকেনে যৌন জনন সম্পাদিত হয় অ্যাস্কোকার্প (ascocarp) দিয়ে। এছাড়া প্লাজমোগ্যামির মাধ্যমেও লাইকেনের যৌন জনন সম্পন্ন হয়ে থাকে। প্লাজমোগ্যামি হলো, যে প্রক্রিয়ায় যৌন মিলনের পর ছত্রাকের দুটি জনন কোষের প্রোটোপ্লাজম মিলিত হয় কিন্তু নিউক্লিয়াস দুটি মিলিত হয় না। লাইকেনের পুংজননাঙ্গকে স্পার্মাগোনিয়াম এবং স্ত্রীজননাঙ্গকে কার্পোগোনিয়া বলে।